সম্পাদকের কলমে: তাপসকিরণ রায়--

প্রেম, শব্দটা জীবনের সবচে মহা মহিম শব্দ। প্রেম ছাড়া জীবন চলে না। বহুরূপী এই প্রেম গ্রহীতার ভাষাভাব অফুরান। হাজারো রঙের মধ্যে দিয়ে আমরা এর ছটা অনুভব করতেই পারি।

প্রকৃতিও বুঝি প্রেমের ডালি সাজায়--রংবাহারে সেজে ওঠে নীলাকাশ, ভোর ও সন্ধ্যা সূর্যের লালিম রশ্মি, মাটির শস্যে সবুজ-হলুদের মেলবন্ধন, বাগবাহার ফুলের মেলা। পাখ পাখালির চহল-পহল, মাটির সোঁদা গন্ধ, নবান্ন ধানের ঘ্রাণ, এ সব মিলিয়ে, ‘সে দিনের সোনা ঝরা সন্ধ্যা’র কথা কে ভুলতে পারে !

এক টুকরো হলুদ রোদে মেখে থাকে মায়াকায়ার কামনা বাসনা। এ সব কিছুর ছোঁয়ায় তৈরী হয়ে যাচ্ছে প্রেমের ভাষা। 'ভালবাসি ভালবাসি', বসন্তের পলাশে, শিশির শেফালির ধারাপাতে বুঝি আলাপিত হয়ে যায়। আমি আছি, তাই তুমি আছো। আমার জন্যে রাখা আছে কোন রাজকন্যা। আর তোমার জন্যে রাজপুত্র। কাঠ কয়লায় পোড়া হোক না কোন দীন মজদুর, সেও কিন্তু একক এক নায়ক। কোন কাঙ্গালিনী দিন ভর অপেক্ষায় বসে থাকে তার। সেও এক মায়ের পেট থেকে জন্ম নিয়েছে ! তার মধ্যেও যে আছে স্নেহ মেহ মোহ প্রেম ভালবাসা। এই সব কিছুর মধ্যে দিয়েই জীবন সতত উৎফুল্লিত হয়ে ওঠে। পুরুষ্ট মনের আবেদন নিবেদনের স্ফূর্তি জেগে থাকে। এই লাল মাটির পথ ধরে বাউল হেঁটে চলে, মুখে তার লেগে থাকে জীবনের টানাপোড়েন গান। সুখ দুঃখ বিরহের সে গান আকাশে-বাতাসে ভেসে যায়। দেহাতী বুনো গন্ধে শরীর জেগে ওঠে, কামনার ঢেউ ওঠে পদ্মকোরকে।

প্রেম অনন্ত আবার সীমায়িত, প্রেম বিরহের বন্দিঘর। প্রেম মুক্ত, প্রেম মৌসুমী, ছলনাময়ী। বয়স ধর্মের আওতার বাইরে কখনো সে হয়ে ওঠে কালাতীত। এখানে জাতপাত নেই, অন্ধ হলেও কখনও হিংস্র। কখনো নিষ্কাম প্রকৃতিতে মাঝে খেলা খেলা চলতেই থাকে। আবার সে খেলা কখনো রহস্যময়ী হয়ে ওঠে। প্রেম সংজ্ঞাহীন অথবা বলা যায় প্রেমের কোন সংজ্ঞা নেই। প্রেম শুধুমাত্র মনের নয়, শরীরেরও বটে।

জীবনে প্রেম এক প্রধান বিন্দু। একাধারে চঞ্চল, ক্ষণস্থায়ী আবার অনন্ত ও সীমাহীন। প্রকৃতি স্পর্শে এসে যেমন এই প্রেম মাটি হাওয়া জলের সংস্পর্শে জেগে ওঠে মহীরুহ তেমনি এই লালন-পালন সোহাগ ভালোবাসা স্নেহ সব মিলেমিশে শেষ পর্যন্ত সৃষ্ট হয় এক প্রাণ। আসলে প্রাণের সৃষ্টি প্রেমের সান্নিধ্যে প্ৰসস্ফুটিত হয়ে ওঠে। এখানে প্রেম ভালোবাসা স্নেহ মেহমোহ আকর্ষণ বিকর্ষণ এ সব কিছুই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। প্রেমের মোহমেহে একটা মেয়ে মা'য়ে রূপান্তরিত হয়। সেই মা'য়ের থেকেই সৃষ্টি হয় সন্তান। এমনি প্রেম-ভালোবাসা সূত্রেই বাধা সমস্ত পৃথিবী, বেঁচে থাকার আশে সর্বদা ঘুরে ফিরে আসে জীবনের সেই উৎস ও উপসর্গগুলি--মোহমেহ স্নেহ প্রেম ভালোবাসা।

এবার আমাদের বর্ণালোক দ্বিমাসিক ব্লগ পত্রিকা ছিল পূর্ণত বিষয়ভিত্তিক। এই সংখ্যাটি নির্দিষ্ট ভাবে আধারিত ছিল প্রেমের বিভিন্ন ধারার ওপর। লেখক লেখিকাদের কাছ থেকে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। এ ব্যাপারে পাঠকও নিরপেক্ষ মতামত দিয়ে আমাদের আরও সমৃদ্ধ করুন।


সম্পাদকের কলমে: শমিত কর্মকার--

মানুষের ব্যাপ্তি যেমন সর্বত্র। কেউ কবিতাকে ভালোবাসে আবার কিছু সংখ্যক মানুষ গল্প ভালোবাসে। তাই লেখক লেখিকারা এখন সর্বত্রই বিরাজমান। পাঠকদের উপরে লেখকের সাফল্য নির্ভর করে। একজন পাঠকই একজন লেখককে খুব করে চিনতে পারে। তাই লেখকের কাছে পাঠকরাই সম্পদ। আমরা তাই সবাইকে চাই। আমরা তাই প্রত্যেক সংখ্যায় বলছি, আপনারা বিশেষ করে পাঠকরা কিছু মতামত দিন। শুধুমাত্র লাইক নয়। ভালোকে ভালো, খারাপকে নির্দ্বিধায় খারাপ বলুন। আপনারা, লেখক পাঠক নির্বিশেষে সবাই আরও বেশি বেশি লেখা পাঠান। সম্পাদক চাইছেন ওয়েব থেকে লেখা নিয়ে তাকে ছাপার অক্ষরে রূপ দিতে। কিন্তু সেটা করতে আমাদের আরও সময় লাগবে। আপনারা আমাদের সাথে থাকলে সহযোগিতার হাত বাড়ালে নিশ্চিত সেটা আমরা পারব।

সম্পাদকের কলমে: সাবিত্রী দাস--

"লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে

রাখনু তবু হিয়ে জুড়ন না গেল। "

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেমের নিদর্শন তো রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা। সে প্রেমের মহাকাব্য তো প্রতিটি মানুষের প্রাণের মাঝে অনুরণিত হয়ে আসছে আবহমানের চিরন্তন সত্য হিসাবে। প্রেমের পাত্র পাত্রী অর্থাৎ নায়ক নায়িকার মনোভাব ঠিক কেমন! প্রেমের স্বরূপটিই বা কেমন জানতে গেলে বৈষ্ণব পদাবলীর পদকর্তাদের কথাই সর্বাগ্রে মনে পড়ে।

উপরোক্ত পদ বিদ্যাপতির রচনা। নবোদ্গমের কিশলয় যেন সেই প্রেম, হাস্যকৌতুকে, লাস্যে, আবেশ মূর্চ্ছনায় সেই প্রেম আনন্দোচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ, প্রেমের হিল্লোলে শিহরিত তনু মন নব নব সুখ- মূর্চ্ছনায় মুখরিত !

তাহলে প্রেম কী শুধুমাত্র সুখের পরশপাথর ছুঁয়ে বসলো আর সব আলোয় আলোময় ! দুঃখ নাই বেদনা নাই, নাই কোন সন্তাপ।

যদি তাই সত্য হয় তবে এ আক্ষেপ কেন! কেন মনে অতৃপ্তির হাহাকার ! এত উন্মাদনা, হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের মিলনের পরেও হৃদয় জ্বালা জুড়িয়ে যাচ্ছে না কেন ! এতকিছুর পরও গভীর অতৃপ্তির সঞ্চার অনুভূত হয় কেন !

প্রেম তাহলে কী?

বড়ো রহস্যময় আর গভীর এ প্রশ্ন থেকেই যায়। মানব মনের চিরন্তন ভাবনায় উদ্বেলিত হৃদয়, প্রেম কে কখনো স্বর্গীয় ভেবেছে, কখনো আবার প্রেমকে নিয়ে এসেছে আপন অঙ্গনে। মনের মাধুরী মিশিয়ে নিবিড় প্রেম দিয়ে রচনা করেছে আপন স্বর্গ। সুখ খুঁজে পেতে চেয়েছে সেই স্বর্গে।

প্রেম তাহলে কী !

সাধারণ ভাবে নরনারীর প্রেমের কথাই যদি ধরা যায়, পরস্পরের প্রতি ভালোলাগা আর ভালোবাসা বুকের ভেতর যে আলোড়ন সৃষ্টি করে সেটাই হয়তো প্রেম ! সহ্য হয় না ভৌগোলিক দূরত্বের সীমা। বেদনা দীর্ণ অন্তরে অনুভূত যাতনা, বিরহ বেদনা মানুষকে আকুল করে তোলে। বিরহ ব্যাকুল সন্তপ্ত হৃদয় আপন করে কাছে পেতে চায় দয়িত বা দয়িতাকে, এটাই স্বাভাবিক জীবনে ঘটে থাকে। তাহলে প্রেম পূর্ণতা পেল বলা যেতেই পারে।

'প্রেম অবিনশ্বর, প্রেম অক্ষয় অব্যয়, প্রেম অজেয়, প্রেম অমর।'

অথচ বাস্তব জীবনের চাওয়া পাওয়ার ঠুনকো আঘাতে চূরমার হয়ে ভেঙে যাচ্ছে সাধের সেই প্রেমময় স্বর্গ। সব ক্ষেত্রে হয়তো নয় তবুও অনিবার্য বিচ্ছেদের পরাকাষ্ঠা ছাড়িয়ে যাচ্ছে পরিসংখ্যান ।

প্রেমের বিরহ মিলন নিয়ে রচিত হয়েছে কতনা কাব্যগাথা, কত কাব্যিক উপমার ব্যবহার ছড়ানো বৈষ্ণব পদাবলীর পদকর্তাদের সময় থেকে আজও অব্যাহত।

আধুনিক বিজ্ঞান বলে মানুষের প্রেমানুভূতির জন্য দায়ী কতকগুলো বিশেষ রাসায়নিক। পিটুইটারি গ্রন্থির থেকে উৎপন্ন ডোপামিন নামক রাসায়নিক যার প্রভাবে প্রেমে পড়ার যাবতীয় আনুষঙ্গিক ঘটনা ঘটে থাকে। এর সঙ্গে সহযোগিতা করতে থাকে অক্সিটোসিন এবং ভেসোপ্রেসিন নামক হরমোন গুলি। এই রাসায়নিক গুলির প্রভাবেই প্রেমের আবেগ অনুভূতি, আকুলতা, তীব্র মিলনেচ্ছা প্রকাশ পায়।

আবার এই হরমোন লেভেলের প্রাবল্য কমতে থাকলে প্রেমের অনুভূতি আকুলতাও কমতে থাকে ক্রমশ। এখানেও কাজ করে যে রাসায়নিকের ম্যাজিক তার নাম এণ্ডোরফিন। এই রাসায়নিকটি সন্তুষ্টি লাভের জন্য দায়ী। মন কানায় কানায় পূর্ণ করে দেওয়ার কাজটি করে থাকে এই হরমোন। এই পর্যায়ে তাই প্রেমের তীব্র আবেগ প্রশমিত, স্থির শান্ত জীবনের পরিপূর্ণ প্রশান্তি।

আসে পারস্পরিক নির্ভর শীলতা যা তৈরী হয় মূলত একসঙ্গে পাশাপাশি বসবাস করার কারণে। তখন গড়ে ওঠে এক সহমর্মিতার মনোভাব বা সম্পর্ক। দায়িত্ব আর কর্তব্য পালনের দায়বদ্ধতা।

এসব বিশদে বলতে গেলে বিশাল এক অধ্যায়।

বিজ্ঞান যাই ব্যাখ্যা করুক না কেন, প্রেমে পড়তে প্রেমের প্রাসাদ গড়তে কিংবা প্রেমের কবিতা আর গল্প লিখতে বাদ সাধেনি যখন প্রেমের গল্পই না হয় হোক না কেন আজকের প্রধান উপজীব্য ।


Sunday 7 March 2021

শ্যামাপ্রসাদ সরকার

                                                    

ওগো কাঙাল আমার

                                  *********************

                               শ্যামাপ্রসাদ সরকার


                                         (১)

সারাটা সকাল অপেক্ষা করেই কাটল বনানীর। রবিবার করে হিমাংশুর পথ চেয়ে থাকাটা গত আট বছরের অভ্যাস। এই অপেক্ষাটুকুই রয়ে গেছে শুধু, নিজের করে পাওয়াটুকু মনে হয় বাকিই রয়ে যাবে। 

রমেন যখন পাঁচ বছরের বিবাহিত সম্পর্কের ইতি টেনে চলে যায় বনানী তখন সবে আঠাশ পার করেছে। ওদের একমাত্র ছেলে বুবুন অটিজমে আক্রান্ত। মনোবিকাশ কেন্দ্রে ছেলের চিকিৎসা, সংসার সব কিছু একা হাতে সামলাতে তখন হিমসিম খাচ্ছে সে। তখনই হিমাংশুদের অফিসে রিসেপশনিষ্টের কাজটা পায়। হিমাংশুও তখন ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে একটা ব্যর্থ দাম্পত্যের বোঝা বইতে বইতে। ওরও একটা বারান্দার দরকার ছিল যেখানে একবার নিভৃতিতে নিঃশ্বাস নিতে পারে দিনান্তে। বনানীর তরফে এই সম্পর্কটায় প্রথম প্রথম সায় ছিল না মোটেও। ঘরপোড়া নিজেই, নেহাত চাকরিটা না থাকলে ছেলের খরচ যোগানো মুশকিল, তাই চাকরি করতে আসা। রমেন অবশ্য কিছুদিন পাঁচহাজার করে পাঠিয়েছিল। নিজে নতুন বিয়ে করে সেও যখন আবার  সংসার পাতলো বসিরহাটে, তখন থেকে সেটুকু সম্বন্ধও ঘুচল। ওর মামারা বাপ মা মরা ভাগ্নীর বিয়ে দিয়ে হাত ধুয়ে নিয়েছিল, কাজেই আক্ষরিক অর্থেই বনানীর দাঁড়ানোর আর কোনো জায়গা ছিলনা। আসলে ছেলেটা  অমন হওয়ায় রমেন ওকেই বরাবর দোষ দিত। ওর ধারণা ছিল বনানীদের পরিবারের জিনের কোনো খুঁতের জন্যই বুবুনটা এরকম প্রতিবন্ধী হল। রমেন ছেলেকে দুচক্ষে দেখতে পারতো না প্রথম থেকেই । শেষের দিকে তো ও আলাদা বিছানায় ছেলেকে নিয়ে শুত।

হিমাংশুর স্ত্রী স্কিৎসোফ্রেনিক। সবসময় অন্য একটা অদ্ভূত ঘোরে থাকে। প্রথমটায় অবশ্য এমন ছিলনা। দুবার মিসক্যারেজ হবার পর থেকে একটা ফ্রিজিডিটি ওকে আস্তে আস্তে ঘিরতে থাকে। ক্রমশঃ হিমাংশুকে আর সহ্য করতে পারতো না। খুব ভায়োলেন্ট হয়ে যেত। জিনিস পত্র ভাঙচুর করতে গিয়ে আহত হয়েছে কতবার ! সুইসাইড এ্যটেম্প্ট পর্যন্ত করেছে।  একটা হোমে রেখে আটবছর হল ওর চিকিৎসা করায় হিমাংশু। এই অবস্থায় ডিভোর্স করাটা খুব অমানবিক দেখাবে, তাই মালবিকাকে ছেড়ে বের হতে পারেনি যেমন, তেমন বনানীকেও অমর্যাদা করতে পারেনি। ভালবাসার কাছে ও অনুগত। কিন্তু মালবিকার জীবদ্দশায় ওর ফ্ল্যাটে বনানীকে রেখে ওকে অপমান করতে ওর বাধে। তাই রোববার সারাটা দিন বনানীর কাছে ও এসে থাকে। বনানীর খরচাপাতিও ওই দেয় আজকাল। তবুও কোথাও একটা অদৃশ্য কাঁটা বিঁধেই থাকে। বনানী আর হিমাংশু এখন আর এক অফিসে চাকরি করেনা অবশ্য। চাকরি ছেড়ে হিমাংশু এখন কন্ট্রাকটরির কাজ শুরু করেছে পার্টনারশিপে। শহরতলির দু একটা মাঝারিমাপের প্রোজেক্টের কাজ জোরকদমে চলছে এখন।

মাছের মাথা দিয়ে সোনামুগের ডাল হিমাংশুর প্রিয় বলে আজ বানিয়েছিল বনানী। সঙ্গে আলুপোস্ত আর কাটাপোনার ঝোল। বাজারটা নিজেই করতে ভালবাসে ও। সপ্তাহান্তে একটা দিন মানুষটাকে একটু ভালো রান্না করে খাওয়াতে পারলে শান্তি লাগে। কিন্তু হিমাংশু আজ এখনো এলোনা কেন? সকাল থেকেই  মোবাইলও বন্ধ আছে। এমন তো হয়না কখনোও ! বনানীর বুকের ভিতর অমঙ্গল আশঙ্কায় দুরুদুরু করে।

গতসপ্তাহে এসেছিল যখন হিমাংশু, শার্টের একখানা বোতাম ছেঁড়া দেখেছিল বনানী। এ বাড়িতে ওর দু তিন সেট কাপড় জামা থাকেই, তাই সেলাই করবে বলে সেদিন জামাটা রেখে দিয়েছিল। বোতামটা বসানোর কথা হঠাৎ মনে পড়তেই তড়িঘড়ি সেলাই এর সরঞ্জাম নিয়ে বসে পড়ে বনানী। বুবুনের খাওয়ার এখনো একটু দেরী আছে। জামাটা সযত্নে বুকের কাছে চেপে ধরে ও। একটা পুরুষালী গন্ধ রয়ে আছে ওতে। সেবার রাঁচি বেড়াতে গিয়ে ছাতিম ফুলের গন্ধে ওর একই সঙ্গে আদর আর কান্না পেয়েছিল। শার্টটায় বোতাম বসাতে বসাতে সেই আবেগঘন দুপুরটার কথা মনে পড়ে গেল হঠাৎ। 

পাড়ায় খুব একটা কারোর সাথে মেশেনা বনানী। একটা চাপা গুঞ্জন যে ওকে নিয়ে হয়; সেটা বেশ বোঝে। হিমাংশুর আসা নিয়েও যে একটা মাখো মাখো পেঁয়াজ রসুনের গন্ধওলা চর্চা চলে তাও বুঝতে অসুবিধা হয়না।  একদম সামনের ফ্ল্যাটের  শিশির রোজারিওদের বাদ দিলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বেশী কথা বলার দরকার পড়েনা অবশ্য। 

বুবুনকে খাইয়ে দিতে হয় এখনো। সেটা সারতে সারতে আড়াইটে বাজল। হিমাংশুর ফোন এখনো বন্ধ। উৎকন্ঠাটা ক্রমশ বাড়ছে এবার। মালবিকার কিছু হলনা তো আবার ! হিমাংশু বলছিল যে প্যানক্রিয়াসের কি একটা যেন ইনফেকশনে কদিন ধরে ভুগছিল মালবিকা। হিমাংশুকে নিজের করে পাওয়ার আশা একেবারে ত্যাগ না করলেও

মালবিকার মৃত্যু কামনার কথা  কখনো কখনো যে ভাবেনি তা নয়। পরমুহূর্তেই আবার সে কথা ভেবে মা কালীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। নিজের কাঙালপনার মূল্যে অন্য কারোর মরণকামনা করা যে পাপ !

**********

                                             (২)


আজ রোববার হলেও সাইটে আসতে হয়েছিল।  কৈখালির প্রজেক্টটা একটা গেরোয় ফেঁসেছে। হিমাংশু আর তার পার্টনার জয়দীপ এই জটটা ছাড়াতে কাউন্সিলারের অফিসে দেখা করতে গেছিল। তাড়াহুড়োয় ফোনটা আজ ওবাড়িতে ফেলে এসেছে। দুপুর গড়িয়ে গেল, মাঝখানথেকে এখনও বনানীর সাথে একবারও কথা হলনা।

চট করে সে বাইরের কারোর ফোন থেকে বনানীকে ডায়াল করেনা। বনানীর ব্যাপারটা আজীবনের যত্নলালিত এক গোপনীয়তা যেন। এই ভীরুতা ওকেও ভাবায়। সবার চোখে ভালমানুষ হয়ে থাকার মোহতে ও ভালবাসার প্রতি অবিচার করছে যদিও।

বনানীর ছটফটানিটা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। রান্না গুলো জুড়িয়ে গেছে কখন। সে নিজেও অভুক্ত। ঘড়ির সময় একটা একটা সংখ্যার ঘর পার করে যাচ্ছে অবলীলায়।  মাথাটা টিপটিপ করে যন্ত্রণা করছে আবার। এইবার একটা ছায়ার মত অন্ধকার ঢেকে আসবে আস্তে আস্তে। হিমাংশুকে লুকিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছে অবশ্য। ব্রেন টিউমার সন্দেহ করছে ডাক্তার ঘোষ। এবারে একটা সি টি স্ক্যান করার কথা। ব্যাপারটা আর লুকিয়ে রাখা যাবেনা হিমাংশুর থেকে। মাথার ভেতরের তীব্র যন্ত্রণার দপদপানিটা বাড়তে থাকে ক্রমশঃ।

সাইট থেকে বেড়িয়ে ট্যাক্সি পেতে বেশ বেগ পেতে হল আজ। এখন প্রায় এক ঘন্টা লাগবে বনানীর কাছে পৌঁছাতে। অধৈর্য হয়ে সিগারেট ধরায় হিমাংশু ট্যাক্সিতে বসে বসেই।

নিজের কিছু হলেই বুবুনের কথা সবার আগে মনে পড়ে। ও বেচারাই সবচেয়ে অসহায় এই পৃথিবীতে। সবাই এমনকি হিমাংশুও বোধহয় কাটিয়ে উঠতে পারবে  বনানীর অনুপস্থিতি কিন্তু বুবুন? ও বেচারা বোধহয় বাঁচবেই না আর ! 

অনেক দূর থেকে একটা নীলাভ আলো আসছে অন্ধকার একটা বিন্দু থেকে। অসংখ্য ধূলিকণার একটা স্তর সেই আলোর পথ জুড়ে ভাসছে। কি সুমধুর একটা শব্দ মন্দ্রিত হচ্ছে তার সঙ্গে। কত আলোর তরঙ্গ, রঙীন স্প্রেকট্রামের মত আসছে আর যাচ্ছে। বুবুন যেন অস্থির  হয়ে উঠলো একটু ! রমেন কি এখনো ওদের ভালবাসতে পারবে না ! মালবিকার ডান বুকে একটা তিল আছে না? হিমাংশু বলে

ফেলেছিল একবার! আলু পোস্তটার তলাটা ধরে গন্ধ বের হচ্ছে, পোড়া একটা ধোঁয়াটে গন্ধ। চামড়া পুড়ছে? সব পুড়ে যাচ্ছে যেন ধিকিধিকি আগুনে ! ট্যাক্সি থামল একটা যেন। অচৈতন্য হতে আর বেশী বাকী নেই।

"হিমাংশু এলে? হিমাংশু এলে? এত দেরী ! 

এত দেরী করলে কেন তুমি?"

সমাপ্ত


সন্ধ্যা রায়

 


হারিয়ে যাওয়া

সন্ধ্যা রায়


বড় বড় আম গাছ, আকাশটাকে ছেয়ে আছে, সূর্য দেখা যায় না। এই আমবাগানের নিচ থেকেই আমি রোজ এই রাস্তায় স্কুলে যাই। গা ছমছম করে, শুকনো পাতাগুলো আমাকে আরো ভয় দেখায়l পা পড়লেই মচমচ করে পাতা ভাঙ্গার শব্দ হয়। আমি ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি এগিয়ে চলিl এবার কানে একটা কারো পায়ে হাঁটার শব্দ আসছে--নিশ্চয়ই কেউ আসছে l পিছনে তাকাবো না। আমিও জোরে জোরে হাঁটতে শুরু করলাম l কিছুটা দূরে গিয়ে শুনলাম, আমার নাম ধরে ডাকছে, পাপিয়া--কোন মেয়ের আওয়াজ। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম, তাকিয়ে দেখলাম, একটা দিদি আমায় ডাকছে, এই দিদিটাকে স্কুলে দেখেছি। দিদি কাছে এসেই বলল, চল আমিও যাবো। 

আমি আর দিদি দুজনে হাঁটতে শুরু করলাম। 

দিদি চলতে চলতে পড়ার কথা, ঘরের কথা সব জিজ্ঞাসা করে । আমি বলে যাই। 

দিদিকে কোনদিন আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি, সাহস পায়নি । দিদি বলে, তুই খুব শান্ত, সুন্দর, মিষ্টি একটা মেয়ে, তোর আওয়াজটাও মিষ্টি--

আমি হাসলাম, মনে মনে ভাবলাম, দিদি দেখতে খুব ভালো, আওয়াজটা একটু মোটা, এ কথা ঠিক। 

এমনটা একটা বছর কেটে গেলো। 

দিদি দাঁড়িয়ে থাকে আমার জন্য, আমরা দুজনে মিলে একসঙ্গে স্কুলে যাই। পথে এখন আর ভয় করে না, অনেক সময় একাই যাই, ভয় পাই না । আমি আর দিদি দুজনেই খুব খুশি । দিদি জিজ্ঞেস করে, পুজোর জামা হয়েছে ? 

আমি মাথা নাড়াই, বলি, আমাদের সবার জামা মা' ই শিলাই করে দেয়--  

দিদি বলে, কাকিমার কাছে আমিও যাবো, শিলাই শিখবো-- 

আমি বললাম, এসো, মাকে তোমার কথা বলেছি, মা তোমাকে দেখলে খুশি হবে । কথা বলতে বলতে হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম। কেউ ডাকছে, সর্বানি দিদিকে, কেউ ডাকছে দিদির নাম ধরে-- 

দিদির দাঁড়ালো, আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তুই চিনিস ওকে ? 

আমি বললাম, না 

ছেলেটা আমাদের পাশে এসে বলল, আমার নাম অনির্বাণ। আমি নতুন এখানে চাকরিতে জয়েন করেছি । কাল তোমাকে হেড স্যারের ঘরে দেখেছি । তোমার নাম ধরে তিনি তোমাকে ডাকলেন তখন আমি তোমার নামটা জেনেছি।

দিদিকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি সময় লাগবে দিদিভাই?

দিদি বলল, একটু দাঁড়া, আমিও আসছি। ওই ছেলেটাকে দিদি বলল, কাল হেড স্যারের ঘরে গিয়েছিলাম, একটা চিঠি পিয়ন ভুলে আমাদের ঘরে দিয়ে গিয়েছিল।  দিদির সঙ্গে আরো দু কথা বিনিময়।

আমরা তিনজন কিছু সময় চুপচাপ স্কুলের দিকে হেঁটে চলেছি। মনে ভাবলাম, লোকটার অফিস অন্যদিকে তবে আমাদের সঙ্গে কেন যাচ্ছে ? খানিক ক্ষণ কোন কথা হল না, একটু পরে ছেলেটি বলল, আমি যাচ্ছি, আবার কথা হবে--সে চলে গেল।

 দিদি হাসলো, বললো বাঁচা গেল--কেন এলো বললো না--এতটা এসে চলেও গেল, কি অদ্ভুত তাই না রে ?

আমি বললাম, হ্যাঁ, পরদিন আবার স্কুলের পথে দিদি আর আমি কথা বলতে বলতে চলেছি।  এরই মধ্যে পাতার সড় সড় আওয়াজ হল। দিদি বলল, দেখ তো পাপিয়া, ওই ছেলেটা বোধহয় আজও আসছে তাই না--

আমি তাকিয়ে দেখে বললাম, হ্যাঁ দিদি, ও আজও আসছে ।

আমাদের কাছে এসে সে বলল, তোমাদের দেখে বের হলাম আমি-- নটায় অফিস আছে তো তাই একটু চা খেতে বেরিয়েছি--

দিদি আমার মুখের কথাটাকে কেড়ে নিয়ে  বলল, কই আপনি তো আমাদের এখানে এলেন-- 

--হ্যাঁ মানে চা তো খাই না, একটু সিগারেট টানব আর তোমাদের সঙ্গে কথা বলব।  

এমনি ভাবে আরো ছযটা মাস কেটে গেল। একদিন আমি স্কুলে যাব বলে দিদির ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, অনির্বাণদা ডাকলো আমায়, পাপিয়া, এটা তুমি সর্বানিকে দিয়ে দিও-- 

আমি বুঝলাম নিশ্চয়ই কোনো চিঠি হবে,  তাই বললাম, আপনি দিদিভাইকে দিয়ে দেবেন-- 

অনির্বাণদা জোর করলে আমি বললাম, দিদি আমাকে আগেই মানা করেছে, বলেছে, কেউ জোর করে দিললেও তুই নিবি না তাই আমি নিতে পারবো না আপনি নিজে দিয়ে দেবেন-- 

অনির্বাণদা যথারীতি চিঠিটা পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন। দিদির ঘরের সামনে এলে দিদি বেরিয়ে এলো। আমরা তিনজন হাঁটছি। একটু এগিয়ে অনির্বাণদা দিদির কাছে একটা বই চাইল আর ঐ বইটাতে চিঠিটা ভরে দিল, তারপর বইটা দিদিকে ফেরত দিল। আমি এটা খেয়াল করেছি কিন্তু দিদি সেটা জানে না। আমি বিকালে স্কুল   থেকে ফেরার সময় দিদিকে বলেছিলাম, অনির্বাণদা, কোন কাগজ তোমার বইয়ের ভেতরে রেখে ছিল দিদি--

পরদিন স্কুলে যেতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিল, দিদির মুখ দেখবার জন্য মনটা কেমন ছটফট করছিল। ভেবে ছিলাম দিদির উজ্জ্বল হাসিখুশি মুখটা দেখবো আমি--খুব খুশি ছিলাম আমি। কিন্তু দিদির মুখ দেখে ভয় পেলাম, একি  অবস্থা দিদির ! যেন সারারাত ঘুমায়নি, খুব কেঁদেছে। পুরো রাস্তা চুপচাপ হেঁটে গেলাম, দিদি একটাও কথা বললো না। আমিও চুপ ছিলাম,আজ অনির্বাণদা এলো না। 

এমনি ভাবে অনেকদিন চলে গেল। সেদিন আমি স্কুলের পথে যাচ্ছি। 

--পাপিয়া, সর্বানি কিছু বলেছে, অনির্বাণ দা বলল। আমি বললাম, না, শুনে ও  চলে গেল। আমি আগে আগে যাচ্ছিলাম দিদি আমার কাছে এলো, আমরা হাঁটছি। আমি দিদিকে অনির্বাণদার কথা বললাম না। দিদিকে দেখেছি কষ্ট পেতে তাই আর সাহস করিনি। 

আবার বার্ষিক পরীক্ষা এসে গেল। হঠাৎ অনির্বাণদাকে দেখলাম, দাদা সাধারণ ভাবে কথা বলছে। এমনি করেই চলছিল দিনগুলি। পরীক্ষার ছুটির পর আমি এইটে, দিদি টেনে। আমরা স্কুলে যাচ্ছি। দিদি যেন কারো অপেক্ষা করছে মনে হল। এমনি সময় অনির্বাণদা এল, বললো, সর্বানি আমার উত্তর চাই-- 

দিদি কিছুই বলল না। অনির্বাণদা চলে গেল। আমি বললাম, দিদিভাই অনির্বাণদা খুব হ্যান্ডসাম তাই না ? হাসিমুখ করে তোমার দিকে তাকায়--যাই বল দিদিভাই অনির্বাণদা খুব স্মার্ট--দূর থেকে হেঁটে আসে যেন বাংলা ছবির নায়ক,  বিশ্বজিৎ--

দিদি একটাও কথা বলল না। আমি বোকার মত বলে চলেছি, এক সময় চুপ হয়ে গেলাম, এরপর অনির্বাণদা দুদিন আসেনি। সর্বানিদি বলল, অনির্বাণের বাড়ি কোথায় জানিস ? 

আমি বললাম--মাঠের ওপারে থাকে, ঘর জানি না, লক্ষ্মীপুজোয় আমাদের ঘরে প্রসাদ খেতে এসেছিল তখন বলেছিল, অনির্বাণদার মা আর বোন ঘাটশিলায় থাকে-- 

দিদি কিছুই বলল না, স্কুল থেকে ফিরছিলাম, দিদি হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল, বলল, বলতো পাপিয়া, আমাকে দেখতে কেমন ? 

আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকলাম। আর মনে মনে ভাবলাম, পরশু অনির্বাণদার অনেক প্রশংসা করেছি তাই দিদি হয়ত আমাকে এমনটা বলছে। আমি হঠাৎ হেসে বললাম, দিদি তুমি খুব সুন্দর--তোমার রেজাল্ট কত ভালো হয়েছে তাই তো অনির্বাণদা তোমাকে এত পছন্দ করে-- 

দিদি যেন আমার কথা শুনতে পেল না। সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে মগ্ন হয়ে থাকল। আমরা ঘরে এসে গেছি। দিদি চুপ করে তার ঘরে ঢুকলো। আমিও নিজের ঘরের দিকে চললাম। ঘরে ঢুকতেই মা বলল, তোর বাবার ট্রানস্ফার হয়ে গেছে--আমরা উড়িষ্যা ছেড়ে মধ্যপ্রদেশে যাব। আমি বসে গেলাম, নিজের কথা ছেড়ে সর্বানিদির কথাই মনে পড়ল। দিদির কি হবে, আমি জানতেও পারব না। দিদি আর অনির্বাণদার বিয়ে হবে। আমি দেখতে পাবো না। পরদিন দিদিকে বললাম, দিদি তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। দিদিকে আজ সাদা শাড়িতে মা সরস্বতীর মত লাগছে কিন্তু মুখটা গম্ভীর তবুও খুব সুন্দর লাগছে। আমি বললাম, আমরা মধ্যপ্রদেশে যাচ্ছি--বাবা ট্রানস্ফার হয়ে গেছে-- 

আমার কথা শুনে দিদির মুখটা শুকিয়ে গেল, বলল, আমাকে ছেড়ে যাস না--আমি একা হয়ে যাব রে! 

আমি বললাম, আমি কি করবো বলো, আমাকে তো যেতেই হবে--আমার নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল। হঠাৎ দেখতে পেলাম  অনির্বাণদা ছুটতে ছুটতে আসছে--হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো, সর্বানি, আমার মা বোন ঘাটশিলায় থাকে--তাই আমি সেখানে ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করেছিলাম--হেড অফিস আমায ট্রান্সফার মঞ্জুর করে দিয়েছে-- 

দিদি অনেক সময় অনির্বাণের  দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকলো। দিদির মাথায় যেন বাজ পড়েছে, তার চোখের জল আটকে রাখতে পারল না, চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, অনির্বাণ আজ তোমাকে সব বলবো বলেই ভেবে ছিলাম। দিদি বলে চলল, আমি কি করে বুঝাবো জানি না, অনির্বাণ, তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। 

আমি এমন একটা পাতকি, আমার জন্মের পর বাবা লোকজন কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না বলে চলে আসে এই জঙ্গলে। ঠাকুমা বলেছিল, ওকে দন্ডক বনে, সীতা মায়ের দেশে নির্বাসন দিয়ে আয়। ওরা পারেনি আমাকে ছেড়ে যেতে। বাবা-মা ভয়ে অন্য কোন সন্তানের মুখ দেখেনি যাতে আমাকে নিয়ে খুব কষ্ট পেতে হয়। অনির্বাণ, তুমি যা ভাবছো আমি তা নই, আমি না স্ত্রী, না পুরুষ, এটুকু বলে দিদি হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলl দিদি আর কথা বলতে পারছিল না। আমিও কাঁদছি । 

হঠাৎ অনির্বাণদা বলল, সর্বানী, আমি তোমাকে না জেনে কষ্ট দিয়েছি। আমি বুঝতে পারিনি, আমাকে ক্ষমা করো--দাদা আর দাঁড়ালো না, চোখে জল নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটতে থাকল।

আমরা ঘরে ফিরে গেলাম। সেই থেকে দিদি আর স্কুলে যেত না। আমরা মধ্যপ্রদেশে চলে গেলাম। পরে একবার উড়িষ্যায় গিয়েছিলাম দিদিকে দেখবো বলে। দিদিকে দেখতে পাইনি, হয়ত ওরাও কোথাও চলে গেছে। 

উদাস মনে ফিরে এসেছিলাম সে দিন। আজও জানি না, অনির্বাণদা আর সর্বানিদি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। 

সমাপ্ত


Friday 5 March 2021

তাপসকিরণ রায়ের ছলনাময়ী প্রেমের গল্প

তাপসকিরণ রায়ের ছলনাময়ী প্রেমের গল্প--

লাল গোলাপ ও স্বপ্নচমক

 

অচিনের খুব ভালো লাগছিল মেয়েটাকে।মুখের লাল মাস্ক তার থুতনির নিচে লেগেছিল। সে হাতে একটা লাল গোলাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। নিশ্চয়ই সে প্রেমিককে খুঁজে ফিরছিল। পূজা প্যান্ডেলে ভিড় না হলেও বেশ কিছু লোক এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

অচিনের খুব সুন্দর লাগছিল মেয়েটিকে। একটু বেশি প্রসাধন করা, সামান্য চাপা রঙ হলেও খুব মিষ্টি লাগছিল তাকে। অচিনের ইদানীং মেয়েদের খুব ভাল লাগে। বিয়ে করবো না করবো না করেও চল্লিশটা বছর সে অবিবাহিত জীবন পার করে দিয়েছে। তার মধ্যে একটা প্রেম গজিয়ে উঠতে উঠতে ফুটুস হয়ে গেল। প্রেমিকা, পাখি হুট করে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে গেল। খুব খারাপ লেগেছিল অচিনের। তারপর  থেকে মেয়েদের উপর থেকে ওর আকর্ষণ কমে যাচ্ছিল, কিন্তু সুন্দর তো সুন্দরই হয়। এই যেমন গোলাপ হাতের মেয়েটাকে খুব সুন্দরী, আকর্ষণীয় মনে হচ্ছিল। অচিনের মুখে মাস্ক আঁটা। পূজামণ্ডপের অনেকের মুখে মাস্ক পরা। এ জন্যে মানুষ চিনতে একটু কষ্ট হয়ে যায়, মুখের আকৃতি রেখাগুলি মাস্কের তলায় ঢাকা পড়ে। কিন্তু এই মেয়েটির মুখে কোন মাস্ক নেই। এক হাতে গোলাপটাকে উঁচিয়ে ধরে সে এগিয়ে যাচ্ছে, কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

--এই তো তুমি ! কত খুঁজছি তোমায়—

অচিন এবার স্পষ্ট তাকাল মেয়েটার মুখের দিকে। মেয়েটা তার সামনে দাঁড়িয়ে।

--আমাকে বলছেন ?

--হ্যাঁ--তোমায় ছাড়া আর কাকে বলবো?

অচিন চিনতে পারছে না মেয়েটিকে। সে ইতস্তত করছে।

--অনীল, কি হচ্ছে কি ?

--আমি অচিন—

--ওই হল, নাও ধরো—হাতের লাল গোলাপটা মেয়েটা অচিনের দিকে এগিয়ে দিল, কি হল ধরো ?

অগত্যা হাত বাড়াল অচিন। মেয়েটা লাল গোলাপ অচিনের হাতে গুঁজে দিল। অচিনের হাত ধরে টেনে আড়ালে একটু ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো, আমি তোমায় ভালবাসি অনীল !

--আমি অচিন, বিড়বিড় করল অচিন।

--আমার অনীল হারিয়ে গেছে, জানো তো, এমনি একটা পূজার দিনে আমার অনীল হারিয়ে গেছে, আজ তোমায় পেলাম। অচিন ! নাও না তুমি আমার ভালোবাসা !

অচিন আমতা আমতা করে, ও নিজেকে এখনো স্বাভাবিক করে নিতে পারছে না। কিন্তু মেয়েটার আকর্ষণ আছে, শ্যামা রঙের মাঝে তার নাক মুখ চোখ বেশ সুন্দর, ধারালো।

--শুনছো আমার কথা ? মেয়েটা অচিনের একটা হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যায় পূজা প্যান্ডেলের বাইরে। ওরা একটা আড়াল নিয়ে দাঁড়ায়।

--তুমি বিয়ে করেছ ?

--না—

--প্রেমিকা মরে গেছে বুঝি ?

--না, বিয়ে করে চলে গেছে। অচিনের জড়তা তখনও কাটেনি।

মেয়েটা অচিনের দুটো হাত বুকের কাছে টেনে নেয়। মাঝখানে তখনও অচিনের হাতে ধরা থাকে লাল গোলাপ। ওরা দুজনেই তার গন্ধ পাচ্ছিল, ওরা দুজনেই নাক টেনে গোলাপের গন্ধ নিচ্ছিল, আধ অন্ধকারে ওরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। অচিন জানতেও পারল না কয়েক মুহূর্তের মাঝে মেয়েটা কি ভাবে যেন তার প্রেমিকা হয়ে গেল ! ও অচিনের আরও কাছে এসে দাঁড়াল। উভয়ের শরীর স্পর্শ হচ্ছিল। পাশদিয়ে লোকজন চলে যাচ্ছিল। ওরা যেন আলো-অন্ধকারের আড়ালে, অচিন ও মেয়েটা একজন আরেক জনের গায়ে মিশে যাচ্ছিল।

মিনিট পনেরো কি ভাবে পার হয়ে গেল অচিন জানে না। হঠাৎ সে দেখল মেয়েটা নির্লিপ্ত নির্বাক হয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। জড়তা ভেঙে অচিন মেয়েটির দিকে প্রায় ছুটে এগিয়ে গেলো, পেছন থেকে ডেকে বলে উঠলো, এই তোমার নাম, মোবাইল নাম্বারটা দিয়ে যাও...

মেয়েটা ততক্ষণে ভিড়ের মধ্যে মিশে গেছে। অচিন হতবাক হল, চমক এক স্বপ্নের মধ্যে একি হয়ে গেল তার ? এটা স্বপ্ন, না বাস্তব ? মেয়েটার দেওয়া সে লাল গোলাপটাও যে তার হাতে নেই! একটা চুম্বনের প্রত্যাশায় মুখের মাস্কটাও কখন যেন খসে পড়েছে।

পূজা প্যান্ডেল থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো অচিন। পাশের দোকানে গিয়ে সে এক প্যাকেট সিগারেট চাইল কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে দেখল এ কি, পাঁচ শ’টাকার নোট কোথায় গেল ? না নেই, কোন পকেটেই নেই।  

সমাপ্ত


 

Thursday 4 March 2021

প্রেরণা বড়াল

 

ছন্দ হারা 

প্রেরণা বড়াল 

---------------------------

আহ্লাদীর চালঢাল আমাদের কারোরই তেমন ভাল লাগত না। মনে হত একটু বেশিই আহ্লাদ । ওর ঢং দেখেই বুঝি নামটা রেখেছিল কেউ। আর ফ্রেন্ড মানে বয় ফ্রেন্ড। সে ও যেন বড় মাস্তান একটা । সারা পাড়ায় ওর দবদবা। পাড়ায় কোথাও কিছু হলেই এক দৌড়ে সে সামনে হাজির। বড় গলায় হাঁক দিত। আর কারো হিম্মত হত না ওর সামনে দাঁড়াতে। ভয়ে সব পালিয়ে যেত। আহ্লাদীর সঙ্গে বড়ই মাখমাখ ভাব।আহ্লাদী ডাকপাড়লেই দেখবে সে উপস্থিত। স্পেশাল খাবার হলে আহ্লাদীকে খেতে দিতো। এ সব কে না দেখেছে। খুঁটিনাটি লিখলে তো ফুরাবে না। অতি তো তখন হল যখন আহ্লাদীর জন্য টগরের মাথা ফাটল।


টগর, আমাদের বাড়ীর কাজের মেয়ে। ওকে কখন পর মনে হত না। ও নিজের মত দেখেশুনে সকল কাজ কর্ম করত। ইদানীং বড় জ্বালাচ্ছিল আহ্লাদী। বুঝতে পারছেন না তো? 

আসুন তাহলে বুঝিয়ে বলি। আহ্লাদী মানে আমাদের বাড়ীর মেটেমেটে রঙের খুব সুন্দর একটা মুরগী।

ওর যে তখন সময় হয়ে এসেছে ডিম পাড়ার। মস্তানের সঙ্গে সারা বাড়ী ঘুরে ঘুরে খোঁজ করে কোথায় ডিম পাড়া যায়। ওর নিজের ঘর পছন্দ নয়। তাই ফাঁক পেলেই ঢুকে পড়ত আমাদের ঘরে। কখন আলমারির উপরে তো কখন বিছানার উপর। আবার কখন টেবিলের উপরের বই খাতা সব ফেলে দিচ্ছে নিচেয়। টগর দুজনের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে একদিন কায়দা করে ধরে ফেলল আহ্লাদীকে। সবে তাকে বারান্দায় নিয়ে এসেছে । আর যায় কোথা। ওর ডাক শুনে মাস্তান কোথা থেকে উড়ে এসে বসল টগরের মাথার উপর। ঠোকরের ভয়ে পালাতে গিয়ে পড়ে যায় টগর। হাত থেকে আহ্লাদী পালাল আর চৌকাঠে লেগে মাথা ফাটল টগরের। সেবার বেশ কিছুদিন লেগেছিল ভাল হতে।


কিছু দিন পর সাদা,কাল নানান  রং মিলিয়ে অনেক গুলি সুন্দর সুন্দর বাচ্চা বেরল ওদের। আহ্লাদী আর মাস্তান দুজনেই টুকটুক করে খাইয়ে বেড়াত বাচ্চাদের। ওদের আর ভয়  কি। যেখানে সেখানে নির্বিঘ্নে দৌড়ে বেড়াত বাচ্চারা। অন্য  মুরগীরা ওদের ধারে কাছে ও আসতে পারত না আহ্লাদীর ভয়ে।


কিন্ত মর্মান্তিক ঘটনাটা ঘটেছিল সেই দিন, যেদিন বাচ্চাগুলকে ওদের ঘরে তুলে দিতে ভুলে যায় টগর। ওদের তখনো  ভাল করে পাখনা গজায়নি। ওরা তখনো লাফিয়ে ঘরে ওঠার মত হয়ে ওঠেনি। আহ্লাদী বোধ করি নিরুপায় হয়ে বাচ্চাদের পাখনার তলায় পেটের কাছে রেখে রাত কাটিয়ে ছিল বাইরে। সকাল হলে দেখি -এক এক করে বাচ্চারা ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে আসছে আম গাছের নিচে থেকে। মা হারা বাচ্চাদের ডাক। সে যে বড়ই কষ্টকর ছিল। কতদিন ধরে বাচ্চারা ডাকল, ডাকল মাস্তান ও কিন্ত আহ্লাদীকে আর পাওয়া গেল না। ওকে হয়ত শিয়ালে নিয়ে গিয়েছিল। আহ্লাদীর বাচ্চাদের টগর কিন্তু এতটুকু ও অবহেলা করে নাই। মন দিয়ে দেখাশোনা করত। একটাকেও মরতে দেয় নাই। তবে মাস্তানকেও দেখাগেছে ওদের আগলে রাখতে, বাচ্চাদের টুকটুক করে ডেকে খাওয়াতে।

কখন কখন দেখা যেত মাস্তান বসে আরাম করছে আর বাচ্চারা ওর গায়ের উপর উঠে উঠে খেলা করছে।


মিত্রাণী আদক


 



পুরানো সে দিনের কথা... 

মিত্রাণী আদক


বাইরে অঝোর বৃষ্টি, গাড়িবারান্দার এসবেস্টসের ছাদে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো বেশ সুরেলাভাবে ঝমঝম শব্দ তুলে অবিরাম ঝরে যাচ্ছে।লালমাটি ধোওয়া ঘোলা জল আঁকাবাঁকা পথে দ্রুত বয়ে যাচ্ছে ঢালু পাতকুয়ার দিকে।আজন্ম ফ্ল্যাটবাড়িতে বেড়ে ওঠা  দুইবেণী ঝোলানো খুদেমেয়ের কাছে সবই যে নতুন।বড় বড় চোখ মেলে অপার আগ্রহে যতটা পারে গেঁথে নিচ্ছে মনের ভিতরে, বাড়ি ফিরে সহখেলুড়েদের কাছে গল্প করতে হবে না। হাতে ধরা একগোছা কাগজের নৌকা বানভাসি হবার অপেক্ষায় থেকে থেকে নেতিয়ে পড়েছে অনেকক্ষন আগেই। মনেই নেই তাদের জলে ভাসিয়ে দেবার কথা। তখনই ঝপাং! অনেকটা জল   ছিটকে এসে ভিজিয়ে দিল মায়ের হাতে মিকি মাউস এমব্রয়ডারি করা সাদা লেসফ্রকটাকে।  দুরন্ত মারকুটে সহখেলুড়েটিকে বকার সাহস নেই, অতএব চেঁচিয়ে মা ওমা, ও কাকীমণি  ডাকতে গিয়ে ঘুমটা ভেঙে গেল।চল্লিশোর্ধ্ব ঘুমভাঙ্গা চোখে বিনা চশমাতেই স্পষ্ট সেই দুষ্টুচোখো হাসিমুখ।তার বয়সটা কিন্তু সেই একই আছে। আস্তে আস্তে আবছা হয়ে আসে,আজ বাইরে বৃষ্টি নেই, বৃষ্টি নেমেছে দু চোখের পাতায়, টুপ টাপ। 

- মা, ওমা,কি হয়েছে?

- কিছু হয়নি তো, ঠান্ডা লেগেছে বোধহয়। নাকি পাওয়ার বেড়েছে চোখের।বুঝতে পারছি না।

আত্মজার ডাকে ঘুমভাঙা চোখে সকাল জাগে। আজ সকাল থেকেই কেমন মনখারাপ করা মেঘলা আকাশ। ঝলকে ঝলকে বৃষ্টি। সকাল থেকেই মন আনমনা।কেন যে হয় এমন। টুকিটাকি ঘরসংসারের কাজ মিটিয়ে জানলার সামনে এসে দাঁড়াই। এক কাপ চা হাতে বাইরে তাকাতেই দেখি, উঁচুনীচু হলুদ মাটি, কতদিনের পুরানো গাছ চারপাশে ঘিরে আছে। তলায় নিরাপদে বাড়ছে নতুন চারার দল।যত হলুদ আর বাদামী পাতা ঝরে ঝরে স্তূপ হয়ে আছে পায়ের তলায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক অন্যদিনকথা।

ধুলো ওঠা মেঠোপথ এই আধা জঙ্গুলে জায়গাটাকে সাবধানে পাশ কাটিয়ে একেবেঁকে চলে গেছে সেই দুরে কোথাও, দৃষ্টিসীমার বাইরে। ঝরা পাতায় মৃদু সোঁদা গন্ধ, অনেকটা দীর্ঘদিন তালাবন্ধ ঘরের চৌকাঠে লেগে থাকা বাসী গন্ধের মত। ঝরা পাতায় সাবধানী পায়ের শব্দ ওঠে।ছেলেটা কালো ট্রাউজার, নীল সাদা চেক শার্ট, কোমরে নেভী ব্লু সোয়েটারটা গিঁট দিয়ে বাধা। মেয়েটা ঘন ঘাস সবুজ প্লিট স্কার্ট, সাদা সবুজ ফুলপাতা ছাপ ফুলস্লিভ টপ,তার ওপরে সামনে খোলা কালো গুজরাটি স্টিচের কাঁচ বসানো ঝলমলে স্লিভলেস জ্যাকেট।

- এই বোকা, আস্তে পা ফেল, শব্দ হচ্ছে কেন? 

- বা রে,  শুকনো পাতা তো

- তবে আর মজা দেখতে হবে না

- কি মজা, বল না

- এইভাবে পা ফেল গবেট কোথাকার, এই আমার মত করে, জুতোটা খুলে হাতে নে না বুদ্ধু।

মজা দেখার উৎসাহে পা টিপেটিপে দুজনে এগিয়ে যায় আরেকটু গাছপালার অন্ধকারে, সঙ্গোপনে। পিছনে পড়ে থাকে এক বাস বোঝাই লোকের হাসিগল্পে সচকিত রোদ্দুরমাখা পিকনিকের সবুজ মাঠ।

একটু এগোতেই কিশোরীর হাত চেপে ধরে সে। ওই দ্যাখ। সামনে অদূরে নাম না জানা বুনো গাছ, ঘন বেগুনী ফুলে ভর্তি, সীমের মত দেখতে লম্বা লম্বা শুঁটি ফলও আছে। খানিক ঝরে পড়ে আছে নীচে শুকনো পাতার বুকে।তার ওপরে দাঁড়িয়ে জড়াজড়ি করা দুটি মানুষ।একই বাসে সবার সাথে পিকনিকে আসা পাড়ার অমুকদাদার সাথে তমুক পিসি।কমলালেবু রঙের হাইনেক টপের সামনের অংশটা সজোরে পিষে আছে ধূসর টিশার্টে ঢাকা চওড়া বুকে। আগ্রাসী চুমুতে ব্যস্ত দুজোড়া ঠোঁটে অশনিসঙ্কেত।বুকের মধ্যে ধুপধাপ... নিজের  হার্টবিট তখন চারপাশের আপাত নিস্তব্ধতায় দামামার মত বাজছে কানে। অমুকদাদার দুঃসাহসী হাত তখন কমলালেবু ছুঁয়ে আরো বেশি কিছুর খোঁজে...অগাধ প্রশ্রয়ে তমুক পিসিও এলিয়ে পড়ে, মৃদু গোঙানী... তলপেট শিরশির করে ওঠে, কানে আগুনের হলকা, চোখ সরানো যায় না...

আবাল্য সঙ্গীটি অপটু হাতে আরেকটু কাছে টেনে নেয়, থরথর করে কেঁপে ওঠে দুজনেই। শীত করে কিনা মনে নেই, তবে আরেকটু ঘন হয়ে আসে দুজনেই, আরেকটু গা ঘেঁষে। হঠাৎই অমুকদাদার মত দুহাতে বুকে জড়িয়ে নেয়, ঠোঁটের ওপর অজানা স্পর্শ, অচেনা স্বাদ।চেনা সহখেলুড়েকে বড় অচেনা লাগে, ভয় করে, বড় হয়ে যাবার ভয়,কিছু এক্টা হারিয়ে ফেলার ভয়। প্রথম ঋতুস্রাবের পর মায়ের বলা সতর্কবানী মনে পড়ে, এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সপাটে একটা থাপ্পড় মারে, তারপর রোদেভরা নিরাপদ আশ্র‍য়ের দিকে দৌড়ায়।শুকনো পাতায় আওয়াজ ওঠে,অলিঙ্গন ভেঙে ছিটকে সরে যায় দুটি শরীর। কিশোরীর তা দেখা বা জানা হয়না। মায়ের কাছে পৌঁছে হাঁপাতে থাকে। চোখ ভরে জল গড়িয়ে আসে এক দুর্বোধ্য অভিমানে।না তাকিয়েও টের পায় একজোড়া চোখের অনুনয়ভরা চাহনি। নাহ, কাউকে কোনদিন বলা হয়নি সে কথা। কোনোদিনও না।

চোখ জ্বালা করে ওঠে। জানলার দিকে পিঠ করে ঘুরে দাঁড়াই। সামনে সাদা দেওয়ালে একটা গ্রুপ ফটো, হলদেটে হয়ে এসেছে, সামনে মাটির ওপর হাঁটু গেড়ে বসা হাসিমুখ এক কিশোর,কালো ট্রাউজার, নীল সাদা চেক শার্ট, পাশে অভিমানে গাল ফোলা কিশোরী, দুই বেনী,ঘন ঘাস সবুজ প্লিট স্কার্ট, সাদা,সবুজ টপ, কালো জ্যাকেট। পিকনিক শেষে শুধু সেইই আর ফেরেনি। সুবর্ণরেখার টলটলে জলে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিল অবেলায়। সবার সাথে পংক্তিভোজনেও সে ছিল তারপর কোথায় যে একা একা চলে গেল একটা ভাঙা ডাল হাতে, কেউ খেয়াল করেনি। অভিমানী কিশোরীর নিদারুণ অভিমানই বোধহয় কাল হয়েছিল। রোজকার স্বভাবমত সেও পিছু ডাকেনি, সঙ্গ নেয়নি অন্য সব দিনের মত। পড়ন্ত বিকেলে খোঁজাখুঁজি শুরু হতে হতে সুবর্ণরেখায় ভেসে গেছিল পূর্বরাগের এক উদ্ভিন্ন বীজ অধ্যায়।

আমার আর কথা বলতে ইচ্ছে করে না।কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না আর।মনে হয় গাছ হয়ে যাচ্ছি, ছড়িয়ে যাচ্ছে আমার ডালপালা, গুচ্ছমূল,আরোহী... শিকড় দিয়ে আশ্লেষে জড়িয়ে নিচ্ছি আমার দুপুরবিলাস, আমার ভাতঘুম, আমার জলছবি কিশোরী প্রেম,আমার সব ভালোলাগা মন্দলাগাটুকু।শীতবিলাসী দ্বিপ্রাহরিক এই

নিস্তব্ধতাকে বড় ভালবাসতে ইচ্ছে করে।হাই পাওয়ার চশমার সামনে ঘোলাটে হয়ে উঠে খোলা উপন্যাসের পাতা।

চশমার কাঁচ মুছে নিই।

কি ক্লান্তই না লাগে,

মনে হয় কত যুগ যে ঘুমাই নি।

অথচ, ঘুম কিন্তু আসেনা।

অপেক্ষা করি দিনভোর।তারপর আমার অভিমানী সই, নির্ঘুম নিঃসঙ্গ শীতের মেঘলা আকাশ, বৃষ্টিভেজা আলসে দুপুর-কে বলি,সেই ভুলে যাওয়া দিনগুলোকে নিয়ে কেন ফিরে আসিস?






স্মৃতি শেখর মিত্র


 
চুলবুলি প্রেমের গল্প

স্মৃতি শেখর মিত্র 


যার জীবনে কখনও প্রেম আসেনি সে আবার প্রেমের কিবা জানে! কিন্তু সেই প্রসঙ্গেই লিখতে বলা হয়েছে তাই লেখা।

ঝাড়খণ্ডের বাঘমারা মহকুমা শহরে আমরা চারভাই কর্মসূত্রে থাকি। আমি ও আমার তিন জন পিসতুতো ভাই।সবাই ভারত কোকিং কোল লিমিটেডে কাজ করি। চারজনার মধ্যে আমরা তিনজন প্রায় সমবয়সী এবং একজন আমাদের থেকে বছর দশেকের বড়। তিনিই আমাদের অভিভাবক । আমরা যে বাড়িতে মেস করে আছি তার মালিক কে বা কোথায় থাকেন তাও জানিনা বা

জানার প্রয়োজন মনে করিনি। পরপর দুটি পার্টিশন দেওয়া বাড়ি একটাই ছাদ।

বেশ বোঝা যায় বাড়িটি ভাড়া খাটানোর জন্যই বানানো হয়েছে। দুটি বাড়িতে একটিই বিরাট উঠান , আমাদের দিকের উঠানে একটি বিশাল নিমগাছ। নিমগাছ থেকে সামান্য দূরে একটা বড়  কূয়া। কূয়ার জলই আমাদের একমাত্র ভরসা। অবশ্য কূয়াটিতে বারমাস জল থাকে যার জন্য খুব একটা অসুবিধা হয় না।

পাশে যিনি থাকেন তিনি একজন ঠিকাদার। উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণসন্তান। ডাকাত অধ্যুষিত জেলা এটোয়া জেলার অধিবাসী এবং বর্তমানে ভারত কোকিং কোল লিমিটেডের একজন পেটি ঠিকাদার। তিনি তাঁর স্ত্রী ও পাঁচটি সন্তানকে নিয়ে থাকেন পাশের বাড়িতে ভাড়ায়। তাঁর বড় মেয়ে রঞ্জনা।

তার বয়স ষোল বছর ,সদ্য যৌবনে পা দিয়েছে। বাকি চার ভাই বোন ওর থেকে ছোট।মিশ্রাজী মানুষ ভালো, কিন্তু তিনি অতিশয় মদ্যপায়ী হওয়ার জন্য সংসারে যে অভাব আছে বেশ বোঝা যায়। আমরা তিনজন মোটামুটি সকলে

পঁচিশ বছরের আশেপাশে। মিশ্রাজী আমাদের প্রতিদিন বিকেলে তাঁর বাড়িতেতাস খেলার জন্য ডাকতেন। 

আমি তাস খেলার ব্যাপারে সেরকম কিছু জানতাম না। মিশ্রাজী পার্টনার হিসেবে বরাবর আমাদের দাদাকে বেছে নিতেন । আমাদের বাকি দুজন অন্য পার্টিতে থাকতেন। আমি ওদের খেলা দেখতাম। উৎসাহ দিতাম। আমাদের খেলা চলাকালীন মিশ্রাজীর বড়মেয়ে রঞ্জনা বারবার ওখানেই ঘোরাফেরা করতো কাজে এবং অকাজে। আমি ঠিক বুঝতে পারতাম না ব্যাপারটা কি? একদিন দুপুরে যখন ওর বাবা বাড়িতে ছিল না এবং ওর মা বাকি বাচ্চাদের নিয়ে ভাতঘুম দিচ্ছেন। সে সময় রঞ্জনা দেখি দড়ি বালতী নিয়ে কূয়া থেকে জল তুলছে কিম্বা জল তোলার ভান করছে এবং নানান রকম ইশারা করছে আমাদের রুমের দিকে তাকিয়ে। বুঝতে পারি ও ইশারায় সাধনকে ডাকছে। সাধন বেরিয়ে যেতেই দেখি সাধন ওকে নিমগাছে টাঙ্গানো দোলনায় দোল খাওয়াচ্ছে।আর নিম গাছের ওপরে চড়ে আছে একটি মেয়ে ওর বয়সীই হবে সাধন ওকে বোধহয় তখনও দেখেনি তাই যখন রঞ্জনা ওপরের দিকে হাসতে হাসতে তাকালো তখন সে দেখলো গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে আছে রঞ্জনার বান্ধবী দীপা। সাধন এ যাত্রায় খুব জোর বেঁচে গেছে। ও আর একটু হলেই দোল খাওয়ানোর সময় রঞ্জনাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে যাচ্ছিল কিন্তু নেহাৎ রঞ্জনার চাতুরীতে দীপাকে দেখে ফেলায় সে কাজটি আর করে ওঠা হয়নি।ওরা এমনিতে খুব রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে।

একথা পাঁচ কান হয়ে গেলে রেহাই থাকতোনা। আমাদের ঐ বাড়িতে টেকা দায় হতো। হয়তো বা মারপিটও হয়ে যেত। তখন কিন্তু কেউ ভাবতো না যে রঞ্জনা সমান দোষে দোষী। সমস্ত দোষ এসে পড়তো সাধনের ঘাড়ে। যাইহোক, প্রেম কিন্তু মানুষকে সাহসী বানিয়ে দেয়।

যতই বাধা বিঘ্ন আসুক কিছুই ওদের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। ওদের দুজনার ক্ষেত্রেও তাই হলো। আমাদের বাড়ির অদূরেই একটি বিশাল মাঠ সেখানে প্রতি বছর রথের সময় মেলা বসে। এবং আশেপাশের কলিয়ারীর মানুষজন ভিড় করে মেলা দেখতে আসে। আমি আর সাধনও মেলায় যাওয়া ঠিক করলাম।

চারদিকে মানুষে মানুষে ছয়লাপ। নানান ধরনের দোকান বসেছে। একটি নাগরদোলা ।মাইকে সবসময় চটুল হিন্দি গান বাজছে এবং মানুষের মনে গভীর আনন্দের ছোঁয়া লেগেছে। দূর দূর থেকে অনেকে এসেছে তাদের নানান ধরনের পশরা সাজিয়ে। তাঁবু খাটিয়ে রয়েছে অনেকে। আবার দুটো ইট দিয়ে  আগুন জ্বালিয়ে গরম গরম চা চপ, সিঙ্গাড়া, জিলিপির দোকান দিয়েছে।সাধনকে দেখলাম অনেকক্ষণ ধরেই উসখুস করছে। আমরা যখন একটি দোকানে বসে চা ও গরম গরম চপ ভাজা খাচ্ছি তখন দেখি রঞ্জনা তার বান্ধবী দীপাকে নিয়ে মেলায় আসছে। আমাকে কিছু না বলেই সাধন ওদের কাছে এগিয়ে গেল।

আমি সাধনের চাঞ্চল্যের কারণটা এখন বুঝতে পারলাম। এসব ব্যাপারে মেয়েরা কিন্তু খুব চতুর হয়। সাধন ওদের দুই বান্ধবীদের নিয়ে একটি চুড়ির দোকানে ঢুকে ওদের দুজনকে অনেক ধরনের, রঙ বেরঙের কাঁচের চুড়ি কিনে দিচ্ছে দেখলাম। আমি ওদের প্রেমের মধ্যে থাকতে না চেয়ে ওখান থেকে সরে পড়লাম। প্রেমের জন্য রথের মেলা, দোল উৎসব এসব তো লেগেই থাকবে।

সমাপ্ত




অগ্নিশ্বর সরকার


পলাশের সিঁদুর

অগ্নিশ্বর সরকার



বর্ষার ফোনে রিং করল অমিত। ‘ভালোবাসি ভালোবাসি’ কলার-টিউনটা বাজছে। 

- বলো।

- আজ কোথায় যাবে আমার বর্ষা?

- ওই মাঠের ধারেই চলো। রোজ রোজ শহরের ঘিঞ্জি আর ভালো লাগে না গো। চেনা লোকের দেখা হওয়ার একটা ভয়। তারপর হাজারো কৈফিয়ত। অসহ্য। আরে আমাদের বাড়িতে সকলে যখন জানে তখন তোদের অতো নাক গলানোর কী আছে বাপু?

- কিন্তু..

- কিন্তুর কী আছে? 

- না গো, ওই মাঠের পাশের মন্দির থেকে সেই কাকিমা কেমনভাবে তাকিয়ে থাকে।

একটু হেসে বর্ষা উত্তর দিল-

- তাহলে কি কাকিমা তোমার প্রেমে পড়ে গেল নাকি! আমি কিন্তু অতো পজেসিভ নই। চাপ নেই, আমি সরে যাবো।

বলেই আবার রিমঝিম হাসিতে ভেসে গেল বর্ষা। অমিত আর বর্ষার প্রেমের বয়স সবে তিন পেরিয়ে চারে পড়েছে। বর্ধমান রাজ কলেজের তৃতীয় বর্ষে পাঠরত দুজনে। একসাথে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করবে, তারপর বিয়ে। দুজনের বাড়িতে প্রায় সকলেই জানে ওদের সম্পর্কের কথা, তার মধ্যেও বাড়িতে না জানিয়ে একান্তে সময় কাটানোর মজাই আলাদা। 

বিকেল ৪টে-য় অমিত আর বর্ষা বাইকে করে হাজির হল তালিত রেলওয়ে ষ্টেশনের পাশের নির্দিষ্ট মাঠের ধারে। কদিন আগেই ফাল্গুন মাসের আগমন ঘটেছে। চারদিকের মতো মাঠের ধারের পলাশ গাছটাও আগুনে লাল হয়ে আছে। 

- আজ কী বলে এলে বর্ষা রাণী? 

- বললাম সুতনুকাদের বাড়ি যাবো। নোটস আনতে। 

- বাড়িতে গিয়ে যদি নোটস দেখতে চায়?

- দেখিয়ে দেবো।

- মানে?

- আরে বেরনোর আগে তনুকে ফোন করে বলে দিয়েছি। তুমি ফেরার সময় আমাকে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দেবে। আমি ওখান থেকে টোটো করে ফিরে যাবো।

- আমার বাইক থাকতে টোটো?

- ওরে আমার বুদ্ধুরাম, বাড়িতে নামাতে গেলে আমাদের এই লুকানো প্রেমের মজাটাই চটকে যাবে।

আস্তে আস্তে প্রেমালাপে মগ্ন হয়ে গেল দুজনে। ইতিমধ্যে অমিত পাশের পলাশগাছ থেকে একটা আগুনে পলাশ গেঁথে দিয়েছে বর্ষার কালো খোঁপায়। একটা উদ্দাম খরস্রোতা কালো নদীর বুকে লাল পলাশ হিল্লোল তুলেছে।

ঘড়িতে এখন সাড়ে পাঁচটা। সূর্যদেব অস্ত যাওয়ার জন্য পদচারনা করছে। বাতাসে একটা সুন্দর শুকনো গন্ধ ভাসছে। অমিতকে তাড়াটা বর্ষা-ই দিল।

- এবার ফেরা যাক। তনুদের বাড়িতেও একটু বসতে হবে। 

- আর একটু থাকো না গো।

- পরশু তো আবার দেখা হবে কলেজে। 

- সেই তো আটচল্লিশ ঘণ্টা।

- এই দেখো, কাকিমা আজও এই দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আজ চলো তোমাদের প্রেমের শুরুটা করিয়ে দিয়ে আসি।

বলেই অমিতের হাত ধরে ওই মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেল বর্ষা। সামান্য বাধা দেওয়ার সময়টুকু পেলো না অমিত। মন্দিরের ভিতরে গিয়ে কাকিমার উদ্দেশ্য হাসি মুখে বর্ষা জিজ্ঞেস করল- 

- আসবো কাকিমা।

কাকিমা অপ্রস্তুত হয় বললেন-

- কিছু বলছো মা?

- এদিকে যে দিনই আসি সেদিনই দেখি আপনি আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিছু ব্যাপার...?

- না তো মা। আসলে আমি রোজ-ই এখানে বসে অপেক্ষা করি পলাশের। তোমরা দাঁড়িয়ে কেন? বসো এখানে।

বলেই বসার জায়গার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন। 

- না কাকিমা। পরে একদিন বসে গল্প করব। কিন্তু আপনি পলাশের অপেক্ষা না কী যেন বললেন?

- হ্যাঁ মা পলাশ। আমার পলাশ। ওই যে গাছ থেকে পলাশ ফুলটা বাবু নিয়ে তোমার খোঁপায় গুঁজে দিল সেটা আমাদেরই লাগানো। আমরা রাজ কলেজে একসাথে পড়তাম। ওই পলাশের লাল পাঁপড়ি সিঁথিতে দিয়েই আমাকে বিয়ে করেছিল পলাশ। তারপর কোথায় চলে গেল। রোজ আমি এখানেই অপেক্ষা করি। হয়তো আসবে।

বর্ষার চোখে এবার সত্যি-ই বর্ষা নামলো। দূরে ষ্টেশন থেকে একটা ট্রেন হুইশেল বাজিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলল।


শ্যামাপ্রসাদ সরকার

                                                     ওগো কাঙাল আমার                                   ********...